শেরপুরে স্বাস্থ্য বিভাগে অনিয়মের মহোৎসব!! নাটের গুরু উপ-পরিচালক ডা. পীযূষ

সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
মঙ্গল, 11.08.2020 - 02:12 AM
Share icon
Image

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শেরপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। এ বিষয়টি সবার চক্ষুর আড়ালে থাকলেও বর্তমানে থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে শেরপুরে স্বাস্থ্য বিভাগে অনিয়মের মহোৎসবের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা নাটের গুরু উপ-পরিচালক ডা. পীযূষ চন্দ্র সুত্রধর। 

“দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক সিজার করার সব যন্ত্রপাতি থাকা সত্বেও কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা (ক্লিনিক) মোস্তাফিজুর রহমান ও উপ-পরিচালক ডা. পীযূষ চন্দ্র সুত্রধর এর যোগসাজশে এ কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার করেন না। “গত দুই বছরে এ কেন্দ্রে মাত্র দুইটি সিজারিয়ান হয়েছে। সিজার করতে আসা রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। “এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় ও রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচেছ”।  

এসব অনিয়মের সাথে একাধিক কর্মকর্তা জড়িত থাকায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। উল্টো যে কর্মকর্তা এ অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন, তার বিরুদ্ধেই শোকোজ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ মার্চ সোমবার শেরপুর শহরের গোপালবাড়ী এলাকায় সদর উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ঔষধ ভাণ্ডার থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ উদ্ধার করা হয়। এসব ঔষধের মধ্যে ছিল মূল্যবান সেফট্রিয়াক্সন, মেট্রোনিডাজল, কটসন ইনঞ্জেকশন, স্যালাইন, গজ-ব্যান্ডেজসহ অজ্ঞান করার এনেসথেসিয়া ও এন্টিবায়োটিক ঔষধ। 

Image

প্রাথমিকভাবে জানাযায়, এই কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা (ক্লিনিক) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের অবহেলায় এসব ঔষধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়েছিল। এতে সরকারি অর্থের অপচয়ের অভিযোগ ওঠলেও এ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করলেও অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে শেরপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: পিযুষ চন্দ্র সুত্রধর এ বিভাগের নানা অনিয়মের সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় এসব অনিয়মের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। 

এ কর্মকর্তার চাকুরী জীবনের ২৩ বছরের মধ্যে ২০ বছরই কাটিয়েছেন শেরপুর জেলায়। এমনকি উপ-পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েও ৫ বছর ধরে এ জেলাতেই রয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার নানা অনিয়মের জন্য পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। উল্টো তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। 

শেরপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অজ্ঞানের ডাক্তার আসলেও নানা কৌশল করে তাদের বিদায় করে দেয়া হয়।  মাতৃসদনে আসা দরিদ্র রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসব বেসরকারী হাসপাতালে সিজার করানোর সাথে জড়িত রয়েছেন উপপরিচাল ডা: পিযুষ চন্দ্র সূত্রধর নিজে, এমনটাই জানালেন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান।

শেরপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ঔষধ ক্রয় না করেই ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে বিল ওঠানোর জন্য দৌড়ঝাপ ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) মো: মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে দু’দফায় সাড়ে চার লাখ টাকা ঔষধ ক্রয় করার জন্য সরকারী অর্থ বরাদ্ধ আসে। নিয়ম অনুযায়ী ওই টাকার ঔষধ ক্রয় করে সাধারণ রোগীদের মধ্যে বিতরণ করার কথা ছিল। এ ঔষধ ক্রয় করতে হলে ক্রয় কমিটির সভা করে কোটেশণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে ঔষধ ক্রয় করার নিয়ম ছিল। ওই ঔষধ বুঝে নেয়ার কথা শেরপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: শারমিন রহমান অমির। তিনি ঔষধ বুঝে নিয়ে যাছাই বাছাইশেষে প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) মো: মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে বুঝিয়ে দেয়াপ কথা ছিল।

কিন্তু এসব কিছুই করা হয়নি। ঔষধ ক্রয় না করেই ভূয়া বিল ভাউচার তৈরী করে কমিটির সদস্যদের অফিসে অফিসে ঘুরে ঘুরে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছিলেন জনাব ডা: মোস্তাফিজুর রহমান।
আর এ টাকা তুলে ভাগভাটোয়ারা করে আত্মসাত করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু শেরপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: শারমিন রহমান অমি ঔষধ বুঝে না নিয়ে ভূয়া বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেননি। 

অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপপরিচালক ডা: পিযুষ চন্দ্র সূত্রধরও ভূয়া বিলভাউচারে স্বাক্ষর করার জন্য ডা: শারমিন রহমান অমিকে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু  ডা: অমি কোন ভূয়া বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেননি। ওষুধ ক্রয় না করায়, বিল ওঠাতে ব্যর্থ হয় তারা। ফলে টাকা ফেরত যায় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে। এতে তার প্রতি ক্ষুব্ধ হন পিযুষ চন্দ্র সূত্রধর।অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবছর এভাবেই ভূয়া বিল ভাওচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে তা ভাগভাটোয়ারা করে নেয়া হয়।

এদিকে এসব ঘটনার জন্য দায়ী উপ-পরিচালক ডাঃ পিযুষ চন্দ্র সূত্রধর ও মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) মো: মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও অদ্যবধি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ অনিয়মের আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয়ায়, এখন উল্টো শেরপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ও শেরপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার এবং ক্রয় কমিটির সদস্য ডা: শারমিন রহমান অমির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা উপ-পরিচালক ডা: পিযুষ চন্দ্র সূত্রধর নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য, ডা: শারমিন রহমান অমিকে হয়রানী করার লক্ষে তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি শোকোজ করেছেন।

অথচ ডা: শারমিন রহমান অমি, শেরপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার কর্মতৎপরতায় প্রাণ ফিরে এসেছে পরিবার পকিল্পনা কার্যক্রমে। প্রথম হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। শুধু তাই নয়, তিনি নানাভাবে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি সচেতন করতে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। 

চলতি বন্যার সময় তার স্টাফদের সাথে নিয়ে নৌকা যোগে বাড়িবাড়ি গিয়ে জনসাধারণকে চিকিৎসা সেবা ও বিনা মূল্যে ঔষধ প্রদান এবং শুকনো খাবার বিতরণ করে সবার মন জয় করেছেন ডা: অমি। করোনা কালীন সময়েও তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে সেবা প্রদান ও সচেতনতা মূলক কার্যক্রম করেছেন। ফলে একজন সফল কর্মকর্তা হিসেবে ডা: অমির পরিচিতি হয়েছে সর্বমহলে। সেই সাথে তিনি প্রশংশিতও হয়েছেন।

এদিকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, মোদাচ্ছের হোসেন জানান, উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে মহা-পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা, এটা আমার জানা নেই। 

এ বিষয়ে সচেতন মহলের দাবি, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

 

Share icon