শেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
বৃহস্পতি, 25.08.2022 - 03:44 AM
Share icon
Image

শেরপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং কতিপয় প্রভাবশালী ঠিকাদার পরস্পর বিরোধী ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। 

এ নিয়ে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত টানা ৩ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। ইতোমধ্যে হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম শংকা প্রকাশ করেছেন ওই নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় শীর্ষ জনপ্রতিনিধিসহ উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করেছেন। সেই সাথে নিচ্ছেন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি।

মঙ্গলবার সন্ধায় নিজ অফিসে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে অভিযোগ করে বলেন, তার দপ্তরের আওতায় ৭শ ঠিকাদার থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত ঠিকাদার ছানোয়ার হোসেন ছানু, হাবিবুর রহমান হাবিব ও সেলিম তরফদার সুজনসহ কতিপয় প্রভাবশালী ঠিকাদার অন্যদের জিম্মি করে একতরফাভাবে প্রায় সকল কাজ করে যাচ্ছেন। 

তারা সিডিউল মোতাবেক কাজ না করায় ও নিম্নমানের লোক দেখানো কাজ করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ আংশিক ও এক-তৃতীয়াংশ করেই পুরো বিল দাবি করে না পেয়ে সম্প্রতি সদর উপজেলা প্রকৌশলী ও শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলীকে নাজেহাল করে অস্ত্রের মুখে হুমকি দিয়েছেন। নিম্নমানের কাজ এবং অনেক কাজ সম্পন্ন না করে বিল উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন সময় আমাকে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। 

তাদের এমন কাজকে সমর্থন করিনি বলেই নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বাসের হেলপার-লেবার দিয়ে সোমবার দুপুরে এক মানববন্ধন এবং ডিসি স্যারের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত আমাকে তারা নানা মাধ্যমে হুমকি প্রদর্শন করছেন। আমি এবং আমার অফিসে কর্মরত সকলেই বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জীবন চলে গেলেও সন্ত্রাসীদের কাছে মাথানত করবো না। অনেক অত্যাচার এবং হুমকি সহ্য করেছি এখন থেকে সে অন্যায়কারী গুটি কয়েকজন ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো। আমার এ প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে এলজিইডি অফিসে সন্ত্রাসী ঠিকাদার মুক্ত হবে। দেড় যুগেরও বেশি সময় থেকে এ অফিসকে জিম্মি করে রেখেছেন তারা। 

তিনি আরও বলেন, সোমবার ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সামনে অফিসে ছানুয়ার হোসেন ছানু ও সেলিম তরফদার সুজন কিছু অচেনা মুখ নিয়ে এসে অশালীন ও অসৌজন্যমূলক আচরনসহ আনঅফিসিয়াল ভাষা ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, গত ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে জেলা পরিষদ অফিসে আমাকে ডেকে নিয়ে যান তারা। তখন তারা আমাকে বলেন, আমাদের কাজের মধ্যে সুবিধা না দিলে মানববন্ধন, ঝাড়ু মিছিল, নারী কেলেংকারীসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি করবেন। আমার কাছে তারা সুবিধা পাচ্ছেন না বলেই এখন আমার প্রতি তারা উঠে পড়ে লেগেছেন উল্লেখ করে তিনি নিজেকে নির্দোষ ও সৎ অফিসার হিসেবে দাবি করে জীবনের চরম ঝুঁকিতে আছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, জনপ্রতিনিধি থাকার পরও ছানুয়ার হোসেন ছানু জামালপুরের চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে এবং হাবিবুর রহমান হাবিব নিজ নাম ধ্রুব ট্রেডার্সসহ একটি যৌথ প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ করছেন দীর্ঘদিন যাবত। 

এছাড়া আরএসডি/ডিবিএস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে সেলিম তরফদার সুজনের সাথে আরও একজন জনপ্রতিনিধি প্রভাবশালী ঠিকাদার রয়েছেন। তবে তার নাম প্রকাশে বিব্রতবোধ করেন তিনি। ওই সময় এলজিইডি’র সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জাহানারা পারভীন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারী স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে সোমবার দুপুরে শহরে ডিসি গেইট অঙ্গনে জেলা ঠিকাদার সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে অভিযুক্ত ঠিকাদারদের কতিপয় অনুসারী তাদের বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান একজন অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও ঘোষখুর কর্মকর্তা। বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর চড়ামূল্যের পরও তিনি ঘোষ বা কাজের পার্সেন্ট ছাড়া কোন কাজ করছেন না এবং সুবিধা আদায় না করতে পেরে বেশকিছু কাজের বিল আটকে দিয়েছেন। 

এজন্য তারা তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ দ্রুত তার বদলীর দাবি জানান, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা। একই দাবিতে বুধবার দুপুরে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঠিকাদার ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব ও সেলিম তরফদার সুজন দাবি করেন, নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মানববন্ধনের পর তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের নামে মিথ্যাচার করেছেন। 

Share icon