শেরপুরে শব্দ দূষণে দুর্বিষহ জনজীবন ! কর্তৃপক্ষ উদাসীন

স্টাফ রিপোর্টার
বৃহস্পতি, 14.03.2024 - 02:39 PM
Share icon
Image

শেরপুর শহরের থানা মোড় এলাকায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে শব্দ দূষণ। আর শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসীনতার অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত  থানামোড় এলাকায় ঢাকাগামী বিভিন্ন দূরপাল্লার পরিবহন বাস গুলো অনবরত হাইড্রলিক হর্ণ বাজিয়ে মারাত্মক শব্দ দূষণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

শহরের থানা মোড় এলাকার স্থানীয় এক গৃহবধু জানান, প্রায় এক যুগ ধরে এখানে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করছি। বাসের হাইড্রলিক হর্ণের শব্দে আমার মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করে। এর জন্য আমি ভারত থেকে একাধিক বার চিকিৎসা করিয়ে এসেছি। এখন ঔষধ শেষ হওয়ায় আবার পুরনো ব্যাথা ফিরে এসেছে। বাচ্চা গুলো মাঝ রাতে বাসের হর্ণের উচ্চ শব্দে ঘুম হতে চমকে উঠে। আমরা খুব কষ্টে আছি। 

তিনি আরও বলেন, সরকার টাকা খরচ করে শহর থেকে বাস গুলোকে বের করার জন্য শেরপুর জামালপুর মহাসড়কের শেরী ব্রিজ হতে অষ্টমীতলা হয়ে কানাশাখোলা বাজার পর্যন্ত প্রশস্ত বাইপাস রোড নির্মাণ করেছে। কিন্ত বাস চালক গুলো বেশি যাত্রীর আশায় থানামোড় হয়ে চলাচল করে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, যাতে বাস গুলো বাইপাস রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং শব্দ দূষণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।" 

স্থানীয় ঝরনা এন্টারপ্রাইজ এর ব্যবস্থাপক ফাহিম হাসান জিহান বলেন, আমাদের শেরপুর শহর অত্যন্ত ছোট শহর। শহরের পাশে বাইপাস রোড থাকা স্বত্তেও দিনে দুপুরে ঢাকাগামী বাস গুলো থানামোড় অর্থাৎ আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে এসে থামায়। গাড়িগুলো অনবরত হাইড্রলিক হর্ণ বাজায়। এতে আমাদের খুব সমস্যা হয়। আমার মাথা ব্যথার জন্য পেইন কিলার খেতে হয়।"

একই অভিযোগ স্থানীয় রুবি মটরস এর মালিক লোকমান হোসেনের। তিনি জানান, থানামোড় কোন বাসস্টপ নয়। তবুও এখানে সব সময় বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা নামা করা হয়। আমরা চাই বাস গুলো বাইপাস রোড ব্যবহার করুক। 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শেরপুর শহরে ডিজেল ও পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, লরি, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ণ ও ডিজেল চালিত ভটভটির মাধ্যমে শব্দ দূষণ হচ্ছে। এতে শহরের থানা মোড়  অংশের শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 

হাইড্রোলিক হর্ণ ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ উল্লেখ আছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়। এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। 

বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সকল জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ণ বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। তবে এ সকল নিয়ম নীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন শেরপুরে বিভিন্ন গাড়ীর হাউড্রোলিক হর্ণ অহরহ বেজেই যাচ্ছে। 

এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস এর শেরপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মারুফুর রহমান বলেন, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন তাদের মধ্যে সারাক্ষণ হর্ন বাজানো গাড়িচালক নিজেই রয়েছেন। এছাড়া আবাসিক এলাকাতেও যে পরিমাণে গাড়ির হর্ন, নির্মাণ কাজ বা মাইকের শব্দ শুনতে হয় তাতে নিজের বাড়িতে বসে থেকেও একজন মানুষের কান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শব্দ দূষণ নিয়ে শেরপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের কঠোর হস্তক্ষেপ নেওয়া উচিত।

Image

এব্যাপারে শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ নূর কুতুবে আলম সিদ্দিকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী আমাদের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও অন্যান্য কার্যক্রম চালু আছে। এছাড়াও শহরের শব্দ দূষণ নিয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজাবে রহমত এর সাথে শহরের বাইরের গাড়ি প্রবেশ এবং শব্দ দূষণ নিয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পারলাম, এটা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের নজরে এনে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

Share icon