শেরপুরে নিরীহ পরিবারের বাড়িতে সংঘবদ্ধ লুটপাট, হামলা ও অগ্নিসংযোগ : আদালতে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
মঙ্গল, 24.06.2025 - 11:57 PM
Share icon
Image

শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের হাতী আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে এক নিরীহ পরিবারের বসতভিটায় সংঘবদ্ধ হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার আট দিন পর, গত ১৯ জুন ভুক্তভোগী মো. আ. মজিদ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধে (দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল) শেরপুর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ প্রতিবেদক ২৪ জুন সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন।

Image

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১১ জুন দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টার মধ্যে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত একদল সন্ত্রাসী আ. মজিদের বাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় অভিযুক্তরা।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা বসতঘরে ঢুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র, চাল-ধান, গরু-ছাগলসহ প্রায় ২২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নেয়। এরপর ডিজেল ছিটিয়ে পুরো বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলে ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।

হামলার পর দুর্বৃত্তরা প্রবেশপথের রাস্তা কেটে ফেলায় পুরো এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০০ পরিবারের যাতায়াত ব্যাহত হয় এবং ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি, যার ফলে আগুনে ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

Image

ভুক্তভোগী আ. মজিদ বলেন, “সব কিছু লুট করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিঃস্ব হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কীভাবে সংসার চালাব, জানি না।”

তার স্ত্রী মোছা. নাছিমা বলেন, “আমাদের কোনো শত্রু ছিল না। তবুও আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হলো। আমি এর বিচার চাই।”

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, “এই পরিবারটি খুবই নিরীহ। কেউ তাদের ঝামেলায় দেখেনি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা পুরো এলাকাকে আতঙ্কে রেখেছে।”

আরেক বাসিন্দা মো. জিয়াল বলেন, “হামলার পর রাস্তা কেটে রাখায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছি। শিশুদের স্কুলে নেওয়া যাচ্ছে না, রোগী নিয়ে বের হওয়া অসম্ভব। প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

”মামলায় দণ্ডবিধির ৪৩৬/৩৪ ধারা এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনের ৪(১)/৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বাদীর দাবি, হামলাকারীদের মধ্যে ৪৯ জনকে তিনি চিনতে পেরেছেন এবং বাকিরা মুখোশধারী ছিল, যাদের দেখলে তিনি শনাক্ত করতে পারবেন।

Image

অভিযোগের বিষয়ে লছমনপুর গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার এংরাজ আলি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, দুই গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছ। এই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও নেতা কর্মীদের নিয়ে আপস মীমাংসার চেষ্টা চলমান আছে।

এ ব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি) মো: সালেমুজ্জামান এ প্রতিনিধিকে মুঠো ফোনে জানান, "এই ঘটনায় দুইটি বাড়ি পুরিয়ে দেওয়ার পৃথক দুটি অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব আদালত কর্তৃক পেয়েছি। এ ঘটনার তদন্ত চলমান আছে। ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট পাঠাবো"। 

এলাকাবাসী দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

Share icon