সরকারি দায়িত্বে গাফিলতি: ব্যক্তিগত স্কুলে সময় কাটাচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষক

স্টাফ রিপোর্টার
মঙ্গল, 23.09.2025 - 12:20 PM
Share icon
Image

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫:

শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্দারিয়া সুতিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় শিক্ষার মান ভয়াবহভাবে নেমে গেছে। একসময় স্কুলে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে সংখ্যা নেমেছে ১০২ জনে।

অভিযোগ রয়েছে—বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন (সুহেল) নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত হন না। সরকারি বিধি অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক হলেও তিনি প্রায়ই সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আসেন। অথচ অ্যাটেনডেন্স খাতায় সকাল ৯টার স্বাক্ষর দেওয়ারও অভিযোগ আছে।

ব্যক্তিগত স্কুল পরিচালনার অভিযোগ:

স্থানীয়দের অভিযোগ, আল আমিন সুহেল শেরপুর শহরের বটতলায় ‘জিদনি মডেল স্কুল’ নামে একটি ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী অন্য কোনো পেশায় সম্পৃক্ত থাকার বিধান নেই। এলাকাবাসীর দাবি, গত ১২ বছর ধরে তিনি নিজের স্কুলে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন, অথচ সরকারি বিদ্যালয়ে দায়িত্বে গাফিলতি করছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মুস্তুফা কামাল বলেন, “শিক্ষকেরা সঠিক সময়ে আসেন না। সোহেল মাস্টার দুই-তিন ঘণ্টা থেকে চলে যান। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে, ছাত্রছাত্রী দিন দিন কমে যাচ্ছে।”

বিদ্যালয়ের জমিদাতা, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সদস্য আব্দুল খালেক জানান, “আমরা যে স্কুলের জন্য জমি দিয়েছি, সেখানে শিক্ষকদের অনিয়মে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দুই বছর আগে টিও/এটিওকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাইনি।”

কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম অভিযোগ করেন, “দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা নিয়ম মানছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো নজরদারি নেই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা জানান, গত ৫ আগস্টের আগে অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের বদলে একজন প্রাইভেট শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নিতেন এবং তাকে পারিশ্রমিক দিতেন।

শেরপুর জজকোর্টের আইনজীবী আলমগীর কিবরিয়া কামরুল বলেন, “সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ওই শিক্ষককে সঠিক সময়ে স্কুলে উপস্থিত থেকে পাঠদান করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি সরকারি বিধিমালার লঙ্ঘন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।”

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সুহেল স্যার সাধারণত সকাল ১১টার দিকে স্কুলে আসেন। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না।” তবে ২ ঘণ্টা দেরিতে আসার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।

শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম বলেন, “আপনার মাধ্যমে এ তথ্য জানলাম। অভিযোগ সত্য হলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সরেজমিনে চিত্র:

১৭ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকরা বিদ্যালয়ে গেলে সহকারী শিক্ষক আল আমিন সুহেল সকাল ১১টা ১৩ মিনিটে উপস্থিত হন। দেরিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি দেরিতে এলেও সঠিকভাবে ক্লাস নিই, শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হয় না।” তবে ব্যক্তিগত স্কুল পরিচালনার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে শহরের বটতলায় জিদনি মডেল স্কুলে গিয়ে জানা যায়—এখানে প্লে থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ছে। স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা ঝিনুক বলেন, “আমাদের এই স্কুলের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন (সুহেল)। তিনি গত ১২ বছর ধরে এই স্কুলটি পরিচালনা করছেন।”

দপ্তরি শক্তি নন্দি জানান, “পরিচালক সাহেব সকালে সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হন, পরে আবার ফিরে এসে এই স্কুলের তদারকি করেন।”

সচেতন নাগরিকদের দাবি, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান রক্ষায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি এ ধরনের অনিয়ম রোধে শিক্ষা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত তদারকি বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

Share icon