শেরপুর এটিআই ক্যাম্পাসে শতবর্ষী গাছসহ বহু গাছ কর্তন: প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
বৃহস্পতি, 11.12.2025 - 06:48 PM
Share icon
Image

শেরপুর কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট (এটিআই) ক্যাম্পাসে শতবর্ষী বটগাছসহ আম, কাঁঠাল, মেহগনি ও ইউক্যালিপটাসের বহু পুরোনো ও মূল্যবান গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। ১০ ও ১১ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসের ভেতরে সরাসরি গাছ কর্তনের দৃশ্য দেখা যায়, যা স্থানীয় জনসাধারণ ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সাংবাদিক প্রতিনিধিরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, এটিআইয়ের প্রিন্সিপাল ড. সালমা লাইজুর সরকারি বাসভবনের ভেতরে শতবর্ষী একটি বটগাছ ও একটি আমগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গাছ কাটার পরে গোড়ায় নতুন মাটি ফেলে কর্তনের চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। একই সময়ে ঐতিহ্যবাহী দেড়শ বছরের পুরোনো ‘শীষ মহল’ ভবনের সামনেও কাঁঠাল, মেহগনি ও ইউক্যালিপটাসসহ আরও কয়েকটি গাছ কাটতে দেখা যায়।

Image

গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, “আমরা প্রিন্সিপালের নির্দেশেই তালিকা অনুযায়ী গাছগুলো কাটছি।”

এ বিষয়ে এটিআইয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রশিদ রানা দাবি করেন, “কোনো গাছ কাটা হয়নি; শুধুমাত্র মরা গাছ পরিষ্কার ও ডালপালা ছাঁটাই করা হচ্ছে।” তবে কাটা গাছ ও পরিষ্কার গোড়া দৃশ্যমান থাকায় স্থানীয়রা তার বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রীন ভয়েস’-এর সভাপতি রফিক মজিদ বলেন,“সরকারি প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষী গাছ পরিবেশ সুরক্ষার অংশ। অনুমোদন ছাড়াই এসব গাছ কাটা স্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন। আমরা দ্রুত তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।” তিনি আরও বলেন, “গাছ কাটার নির্দিষ্ট সরকারি বিধান রয়েছে। কিন্তু এটিআইয়ে তা মানা হয়নি, যা গুরুতর অনিয়ম।

Image

”অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল ড. সালমা লাইজু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বাৎসরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে শুধু কিছু ডালপালা ছাঁটাই করা হয়েছে। বড় কোনো গাছ কাটা হয়নি। বন বিভাগের অনুমোদনও প্রয়োজন ছিল না।”

বন বিভাগের শেরপুর ফরেস্ট রেঞ্জার ফারুক হোসেন বলেন, “সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়া গাছ কাটা আইনবিরুদ্ধ।” তার বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়- এটিআইয়ে যদি গাছ কাটা হয়ে থাকে, তা নিয়ম-নীতির বাইরে হয়েছে।

Image

স্থানীয়রা জানান, “এসব পুরোনো গাছ ছাত্রদের জন্য ছায়া, পরিবেশের ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। গাছ কাটার আগে পরিবেশগত ক্ষতি বিবেচনা করা উচিত ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।”

এটিআই কর্তৃপক্ষ গাছ না কাটার দাবি করলেও শ্রমিকদের বক্তব্য ও现场ের তথ্য এ অভিযোগকে আরও শক্তিশালী করেছে। বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাছ কাটার ঘটনায় পরিবেশবাদী ও স্থানীয় মহল প্রশাসনিক তদন্তের দাবি তুলেছে। বিষয়টি শিগগিরই জেলা প্রশাসনের নজরে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Share icon