গারো পাহাড়ে বরবটি চাষে সাফল্যে: ভালো ফলন ও ন্যায্যমূল্যে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকরা

শ্রীবরদী প্রতিনিধি
সোম, 27.10.2025 - 03:11 AM
Share icon
Image

মোঃ শাহ্ আলম, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)
শেরপুরের গারো পাহাড়ে এখন সবুজের উচ্ছ্বাস। বরবটি চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়ে হাসি ফুটেছে পাহাড়ি কৃষকদের মুখে। একসময় পতিত পড়ে থাকা জমিতে এখন ফলছে আগাম শীতকালীন এই লাভজনক সবজি। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় বদলে যাচ্ছে আদিবাসীসহ স্থানীয় কৃষকদের অর্থনৈতিক চিত্র।

শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ি এলাকায় কয়েক বছর আগেও কৃষিকাজ ছিল খুবই সীমিত। অনাবাদি পাহাড়ি জমিতে এখন ফলছে বরবটি, শিমসহ নানা জাতের সবজি। এতে করে একসময় বেকার থাকা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য।

শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নের কর্ণজোড়া, মেঘাদল, বাবেলাকোনা, চান্দাপাড়া, হারিয়াকোনা, দিঘলাকোনা ও দার্শিকোনা এলাকার কৃষকরা জানান, বরবটি চারা রোপণের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। এতে খরচ তুলনামূলক কম হলেও লাভ অনেক। ফলে কৃষকেরা এখন আগ্রহ নিয়ে এই ফসল চাষ করছেন।

স্থানীয় কৃষক জোসেফ কোচ বলেন, “আগে পাহাড়ের জমি অনাবাদি ছিল। এখন বরবটি চাষ করে আমরা ভালো আয় করছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এই সবজি বিক্রি হচ্ছে, তাই দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।”

মেঘাদল বাজারে প্রতিদিন বিক্রির জন্য আসে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ বরবটি। এখান থেকে শেরপুর ছাড়াও ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় তাজা সবজি। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, প্রতিদিন বাজারে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার বরবটি কেনাবেচা হয়।

শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, “এ বছর ৫০ হেক্টর জমিতে বরবটি চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও কৃষকদের আগ্রহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হেক্টরে। কৃষকরা ফলন ও বাজারদরে সন্তুষ্ট। এতে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।”

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “জেলার তিনটি সীমান্তবর্তী উপজেলা—শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে মোট প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে বরবটি ও শিম চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। ফলে ফলন ও কৃষকের আয়- দু’টিই বেড়েছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, বরবটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, আয়রন, পটাশিয়াম ও জিংক, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

গারো পাহাড়ের যে জমি একসময় অনাবাদি ছিল, আজ সেই জমিই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবিকার আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। বরবটির সবুজে এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পাহাড়, আর কৃষকের মুখে ফুটেছে সাফল্যের হাসি।

Share icon