কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি: গ্রামীণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ, বিভাগীয় তদন্তে আত্মসাৎ প্রমাণের ইঙ্গিত

প্রতিবেদক, মারুফুর রহমান, শেরপুর।। শেরপুর সদর উপজেলার কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংক শাখার সেকেন্ড অফিসার শামসুন্নাহার ‘আশা’-এর বিরুদ্ধে কৃষিঋণ কার্যক্রমে অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ এবং গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত কৃষকদের লক্ষ্য করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি দালালচক্রের সহায়তায় এই প্রতারণা চালিয়ে আসছেন।
প্রতারিত গ্রাহকদের ভাষ্যে উঠে এসেছে চিত্রটি আরও স্পষ্টভাবে:
বলায়েরচর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের মোছা. খাদিজা খাতুন জানান, “আমি জানতাম ২ লাখ টাকার ঋণ পেয়েছি। অথচ পরে জানতে পারি, আমার নামে ব্যাংক ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে। দালাল ইসমাইল ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছেন, আর বাকি ৫০ হাজার টাকার কোনো হদিস নেই।”
একই ইউনিয়নের হেজাক মিয়া বলেন, “আমার নামে আড়াই লাখ টাকা ঋণ ছাড় হলেও হাতে পেয়েছি মাত্র এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বাকি ৯৫ হাজার টাকার কোনও হিসাব নেই। আমাদের মতো সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে প্রতিদিন এই রকম দুর্নীতি হচ্ছে।”
ডোবারচরের কৃষক আব্দুল করিমের দাবি, “আমি ভেবেছিলাম ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। পরে ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি আমার নামে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার ঋণ ছাড় করা হয়েছে। আমাকে অতিরিক্ত টাকার ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি।”
এমন একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ‘আশা’ ও বলায়েরচরের দালাল ইসমাইল একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে এই অনিয়ম করছেন। এতে ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু:
২০ জুলাই বিকেলে গ্রাহকরা ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করেন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন রাত সাড়ে বারোটায় তিনজন গ্রাহককে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেন এবং আরও ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পর রাত দেড়টার দিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি।
ব্যাংক ম্যানেজারের স্বীকারোক্তি ও বিভাগীয় অবস্থান:
কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, “অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযুক্ত কর্মকর্তা আশার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে ফেরত দিয়েছি। আজকের (২১ জুলাই) মধ্যেই আরও ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হবে।” তিনি আরও জানান, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্তে জালিয়াতির সত্যতা মিললে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া:
শেরপুর জেলা তাতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “এই ধরনের প্রতারণা গ্রামীণ জনগণের জন্য চরম ক্ষতিকর। অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।”
স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা বলেছেন, “এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক মৌখিক অভিযোগ ছিল। এবার অডিট শুরু হওয়ায় দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। দ্রুত তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।