শেরপুরে সাংবাদিকতার ভেতরকার বিভেদ : একটি অশনি সংকেত

মারুফুর রহমান:
শেরপুর জেলা শহর আজ আর শুধু একটি ছোট শহর নয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, উন্নয়ন প্রক্রিয়া কিংবা সাংস্কৃতিক চর্চায় শেরপুরের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। জাতীয় ও স্থানীয় পরিসরে শেরপুরের খবর প্রতিদিন ছাপা কাগজ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিংবা টেলিভিশন স্ক্রিনে নিয়মিত উঠে আসছে। সাংবাদিকতার এ বিস্তার নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে- এই বিস্তারের মধ্যেই দানা বাঁধছে ভেতরকার বিভেদ, যা সাংবাদিকতা পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
প্রতিযোগিতা থাকবেই কিন্তু শেরপুরের সাংবাদিকদের মধ্যে সেই প্রতিযোগিতা আজ অনেক সময় পরিণত হচ্ছে বিরোধে। একজন আরেকজনকে হেয় করছেন, মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন, কিংবা প্রভাবশালী মহলের কাছে সহকর্মীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন- এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে প্রায়ই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই সংবাদ কাভার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে বাদ-প্রতিবাদের প্রবণতা তৈরি হয়। এতে সংবাদকর্মীদের পেশাদারিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।
সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনগণের আস্থা। কিন্তু যখন মানুষ দেখে- সংবাদকর্মীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন, তখন তারা সংবাদ মাধ্যমকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন না। এভাবে আস্থা নষ্ট হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গণতন্ত্র, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার শক্তি।
শেরপুরের সাংবাদিকদের বিভেদ শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, সংগঠনগুলোতেও এর প্রভাব পড়ছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে সংগঠনগুলো ভেঙে যাচ্ছে, ফলে যৌথভাবে কোনো দাবি আদায় কিংবা সমস্যা মোকাবিলা দুরূহ হয়ে পড়ছে। অথচ শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সমাধান কোথায়?
সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতার নয়, বরং দায়িত্ব ও বিশ্বাসের জায়গা। তাই বিভেদ ও অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। সহকর্মীকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগী হিসেবে ভাবতে হবে। সাংবাদিকতার লক্ষ্য একটাই- সত্যকে তুলে ধরা, অনিয়মকে প্রকাশ করা এবং সমাজকে সঠিক তথ্য দেওয়া।
পরিশেষে শেরপুরে সাংবাদিকতার ভেতরকার বিভেদ এখন অশনি সংকেতের মতো দেখা দিচ্ছে। যদি এখনই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা না যায়, তবে পেশার মর্যাদা ও জনগণের আস্থা দুটোই হারিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা খুব সহজ- সাংবাদিকরাই যদি সংবাদকে কলুষিত করেন, তবে জনগণ কোথায় যাবে নির্ভরযোগ্য তথ্যের খোঁজে?