শেরপুরে হত্যা মামলাকে প্রভাবিত করতে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১ ডজন হয়রানী মূলক মামলা

সম্পাদক-প্রকাশকঃ মারুফুর রহমান মারুফ
বুধ, 07.07.2021 - 07:00 PM
Share icon
Image

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শেরপুর সদর উপজেলার চাঞ্চল্যকর শ্রীমত হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে নিতে এবং হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে হত্যা মামলার আসামী ও তাদের আত্মীয় স্বজন দিয়ে একেরপর এক মিথ্যা মামলা দায়ের অব্যহত রেখেছে। শ্রীমত হত্যা মামলার বাদী উকিল মিয়া, স্বাক্ষী শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, সাংবাদিক শাহরিয়ার শাকির ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের আসামী করে এ পর্যন্ত ১২টি মিথ্যা, হয়রানীমুলক ও ভিত্তিহীন মামলা কোর্টে দাখিল করেছে বলে শ্রীমত হত্যা মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন।

মামলা সূত্রে জানাযায়, শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া বালুরঘাটে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল একাডেমী নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় বালুরঘাট মডেল স্কুলের পরিচালক রেজাউল করিম সাদাসহ একটি উশৃংখল গ্রুপ। তারা শুরু থেকেই স্কুলটি প্রতিষ্ঠায় নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিলো। এক পর্যায়ে তারা একাধিক বৈঠক করে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

বিগত ২০ ফেব্রুয়ারী বিকেলে আতিউর রহমান মডেল একাডেমীর সংস্কার কাজ দেখে বালুরঘাট গ্রামের বাড়ীতে গেলে রেজাউল করিম সাদা, আক্রাম হোসেন আঙ্গুর তার ভাই কাশেম ও জামান মেম্বারের নেতৃত্বে চারদিক থেকে হামলা চালায় ও ভাংচুর এবং লুটপাট করে। এ সময় সদর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে অন্তত ১২জনকে আহত করে সন্ত্রাসী ওই গ্রুপটি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান সাংবাদিক মেরাজ। সাংবাদিক মেরাজের চাচা শ্রীমত আলী (৫৫) আহত হয়ে প্রথমে শেরপুর জেলা হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজহা সপাতালে নেয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পর থেকেই পৌনে দুই মাস ওই গ্রামে সার্বক্ষনিক পুলিশ মোতায়েন থাকে। ফলে ওখানে আর কোন প্রকার ঘটনাই ঘটেনি। পরবর্তীতে শেরপুর সদর থানার পুলিশ দীর্ঘ তদন্তশেষে আদালতে রেজাউল করিম সাদা, আক্রাম হোসেন আঙ্গুর, কাশেম, ও জামান মেম্বারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।

কিন্তু আসামী পক্ষ এ হত্যা কান্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে থেকে বাঁচতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আসামীদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য দিয়ে একেরপর এক মিথ্যা অভিযোগ আদালতে দাখিল করেই চলেছে। এ পর্যন্ত ১২টি হয়রানি মূলক ও মিথ্যা এজাহার তারা দাখিল করেছে। আসামীদের বাড়ীঘরের মালামাল নিজেরাই সরিয়ে রেখে হত্যা মামলার বাদী উকিল মিয়া, স্বাক্ষী ও শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক মো: মেরাজ উদ্দিন, তার ছেলে নিউজ বাংলা২৪ ডটকম ও আজকের দর্পনের জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক শাহরিয়ার শাকিরসহ হত্যা মামলার অন্যান্য স্বাক্ষী এবং আত্মীয় স্বজন, গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অপরদিকে গত ১মার্চ ৮০ বছরের বৃদ্ধ সাজ উদ্দিন মামুন শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দুই মেয়ে তাকে শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩মার্চ রাতে মারা যায় অসুস্থ মামুন। এ ঘটনায়ও তারা স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যাকান্ড বলে চালানোর জন্য চেষ্টা করে।

পরে এ বিষয়ে থানা পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরী করে মৃত মামুনের লাশ ময়না তদন্ত করে। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও তার শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন পায়নি ময়না তদন্ত করা ৩সদস্যের ডাক্তারের টিম। অসুস্থতা জনিত কারণেই তার মৃত্যু বলে পোষ্ট মর্টেম (ময়না তদন্ত) রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আসামীরা আদালত থেকে সাময়িক জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে প্রথমে শ্রীমত হত্যা মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয় এবং পরে ওই মামুনের স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যা বলে শ্রীমত হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ফারুক মিয়া আদালতে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিন, তার ছেলে সাংবাদিক শাহরিয়ার শাকিরসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক অভিযোগ দায়ের করে।

এবিষয়টি শেরপুর সদর থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এসব মামলার মধ্যে ৩টি সি আইডিতে, ৪টি পিবিআইয়ে ও ৪টি সদর থানায় তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে।

এদিকে আসামীরা জামিনে বের হয়ে শ্রীমত হত্যা মামলার বাদী, স্বাক্ষী ও তার আত্মীয়স্বজনদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। মিথ্যা মামলা, লুটপাট করাসহ নানা হুমকি দেয়ায় তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে থানায় একাধিক জিডিও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিন জানান, ঘটনার পর থেকে আমি এবং আমার ছেলে শাহরিয়ার শাকির একদিনও গ্রামের বাড়ীতে যায়নি। অথচ আমাকে এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধেও মিথ্যা সাজানো ও কাল্পনিক মামলা দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় হাসপাতালে ভর্তি রোগী, ঢাকায় কোম্পানীতে চাকুরীজীবি ও অবস্থানরত আমার আত্মীয়স্বজন, স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসার সভাপতিসহ গন্যমান্য ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধীদেরও মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। এগুলো শুধু মাত্র হত্যা মামলা থেকে বাচাঁর জন্যই করা হচ্ছে।

হত্যা মামলার বাদী উকিল মিয়া জানান, আমাকে প্রায়ই হুমকি দিচ্ছে। আমি নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছি। আসামী জামান মিয়ার অবৈধ ও সুদের লগ্নি করা কোটি কোটি টাকা আছে, প্রধান আসামী সাদা ও তার ভাগ্নেদের অনেক টাকা আছে। টাকার জোরে আমাদেরকে ঠিক করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।

এ বিষয়ে শেরপুর জেরা হাসপাতালের আরএমও ডা: খায়রুল কবির সুমন জানান, আমরা একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করে সাজ উদ্দিনের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বা আঘাত জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়নি।

এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী বলেন, আমরা সব কিছু জানি। আমরা ন্যায় ও সঠিক ব্যবস্থাই গ্রহণ করবো।

Share icon