৭৫ বছর ডিপ্লোমাতেই বন্দি শেরপুরের এটিআই: দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের

স্টাফ রিপোর্টার
বৃহস্পতি, 02.06.2022 - 04:18 PM
Share icon
Image

বৃটিশ শাষণের অবসান হলে তৎকালীন তিনআনি বাড়ীর দুই জমিদার সহোদর সতেন্দ্র মোহন ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী দেশ ছাড়েন। রেখে যান বিশাল ভূসম্পদ। ১৯৫৭ সালে ওই সম্পদের ৪৩ একর জায়গার ওপর তৎকালীন সরকার শেরপুর শহরে (নারায়ণপুর-বটতলা) এক বছর মেয়াদী কৃষি ট্রেনিং (ডিপ্লোমা) ইনিস্টিটিউট (এটিআই) প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯৮৭ সালে দুই বছর মেয়াদী, ১৯৮৯ সালে তিন বছর মেয়াদী এবং সর্বশেষ ২০১১ সাল থেকে সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়। এখানের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতেই ডিপ্লোমা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কেটে গেছে ৭৫ বছর। এত বছরেও ডিপ্লোমাতেই বন্দি থেকে গেল এটিআই। জেলাবাসীর দাবি প্রতিষ্ঠানটিকে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।

জানা গেছে, অনগ্রসর সীমান্তবর্তী ও চরাঞ্চলে ঘেরা জেলা শেরপুরের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও রেল লাইন। বিভিন্ন সময়ে এগুলোর প্রতিশ্রুতিও কম দেওয়া হয়নি। দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলায় বিশেষ উন্নয়ন হলেও এর ছিঁটে ফোটাও এই পিছিয়ে থাকা জেলায় লাগেনি। 

তাই জেলাবাসীর দাবি এই এটিআইকে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। এখানে বিশাল অব্যবহৃত সরকারি জমি রয়েছে। এই কবছরে বেশ কিছু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কিছু ভবন হচ্ছে। স্থানটি শহরের ভেতরে ২নং ওয়ার্ডে হলেও প্রতিষ্ঠানের ভিতর গ্রামীণ পরিবেশ। প্রতিষ্ঠানের ৪৩ একর জায়গাসহ সকল স্থাপনা বিশাল এলাকা সুউঁচু বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। রয়েছে বিশাল বড় সাতটি নান্দনিক ঘাট বাঁধানো পুকুর।

জমিদারদের পরিত্যাক্ত আবাসনের কারুকাজমণ্ডিত বিশাল অট্রালিকা। জমিদারি পরিচালনার এজলাসহ নানা প্রত্নতত্ত্ব। নৃত্যশালা আর জমিদারদের ব্যবহৃত নানা উপকরণ। আছে বিশাল খেলার মাঠ। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে শ্যামল গাছ ছায়া আর নির্মল বায়ু, সব মিলিয়ে অবস্থানগত দৃষ্টিতে স্থানটি অনেকটা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যায়য়ের মত হবে। এত সম্ভবনা থাকার পরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিষ্ঠানটির কোন উন্নয়ন কিছু হয়নি। নাগরিক সমাজের দাবী এই এটিআই বিশ্ববিদ্যায়ে হলে এখানকার গরীব শিক্ষার্থীরা এখানেই পড়তে পারবে। সেইসাথে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা শেরপুরের যুবসমাজ উচ্চ শিক্ষার আলো দেখতে পারবে। ভৌগলিক কারণে সুবিধা পাবে প্রতিষ্ঠানটির চারপাশে থাকা পাশ্ববর্তী রংপর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার বেশ কিছু অনুন্নত উপজেলা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সরকার জমি ও স্থাপনাসহ অনেক কিছুই রেডিমেট পাবে। বাঁচরে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ। সর্বপরি এটিই হবে জেলায় একমাত্র একটি দৃশ্যমান উন্নয়ন। 

স্থানীয়রা বলেছেন, স্বাধীনতার পরে থেকেই শোনা যাচ্ছে এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। কিন্ত রাজনৈতিক ঐক্যের সিদ্ধান্ত হীনতায় তা আজো হচ্ছে না। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি সারা দেশে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান হলেও শেরপুরে সেটা নেই। তাই শেরপুরের এই এটিআইকে বঙ্গবন্ধু অথবা তার পরিবারের যে কারও নামে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়লে রূপান্তর করা হোক। 

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরল ইসলাম হিরু, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আখরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, জনউদ্যোগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ অসংখ্য নাগরিকরা বলেছেন, বিষয়টি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন। খুব দ্রুত স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্ত চিন্তার নাগরিকরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিবে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরল ইসলাম হিরু জানিয়েছেন, যার নামে দেশ হলো তার (বঙ্গবন্ধু) বা তার পরিবারের নামে এখানে কিছুই হয়নি। এটিআইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেত রাষ্ট প্রধানের কাছে চিঠি দেওয়া হবে।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ ড. মো মঈন উদ্দিন বলেছেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে বাঁধা নেই। কিছু অসুবিধা থাকলেও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার সব সুযোগ এখানে আছে। পাশাপাশি ডিপ্লোমার শাখাটা রাখলে ভাল হবে। 

Share icon